মূল পাতা আন্তর্জাতিক আগরতলায় হাইকমিশনে হিন্দুত্ববাদীদের হামলা; ভারতের দুঃখ প্রকাশ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক 02 December, 2024 10:28 PM
ত্রিপুরার আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাই কমিশনের প্রাঙ্গণে জোর করে ঢুকে হামলা চালিয়েছে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা। ঘৃণ্য এ ঘটনাকে ’দুঃখজনক’ বলেছে ভারত সরকার।
সোমবার (২ ডিসেম্বর) দুপুরের দিকের এ ঘটনায় বিক্ষোভকারীরা মিশনের প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়ে হিন্দুত্ববাদীরা হামলা চালায়। পরে তারা সেখানে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নামিয়ে ফেলেছে বলে ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও বিবিসি বাংলার খবরে বলা হয়েছে। পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পরে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়।
হঠাৎ এ হামলার পর মিশনের সদস্যদের নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে থাকার কথা তুলে ধরেছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিক্ষোভকারীরা পুলিশের নিস্ক্রিয় থাকার সুযোগ নিয়ে তাদের সামনেই ‘পরিকল্পিতভাবে’ মিশনের ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর চালিয়েছে। তারা সহকারী হাই কমিশনের ভেতরের জিনিসপত্র ভাঙচুর করে।
“হিন্দু সংঘর্ষ সমিতি” নামের উগ্র হিন্দুত্ববাদী একটি সংগঠনের আহ্বানে এদিন দুপুরে আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাই কমিশনে ব্যাপক বিক্ষোভের এ খবর দিয়েছে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি সংবাদমাধ্যমও।
বাংলাদেশ সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তার ও কারাগারে পাঠানোর নিন্দা জানিয়ে ওই বিক্ষোভ হওয়ার কথা বলা হয় এসব খবরে।
এ ঘটনার পরে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ বিষয়ক বিবৃতিতে বলা হয়, আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাই কমিশন প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়ার ঘটনা ‘গভীর দুঃখজনক’। কোনো অবস্থাতেই কূটনৈতিক ও কনস্যুলার স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু করা উচিত নয়। নয়া দিল্লিতে বাংলাদেশ হাই কমিশন ও দেশের অন্যত্র উপ বা সহকারী হাই কমিশনগুলোর নিরাপত্তা বাড়াচ্ছে সরকার।
বিবিসি বাংলা বলেছে, আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে ভাঙচুর ও জাতীয় পতাকা নামিয়ে ফেলার ঘটনা ঘটেছে।
কলকাতা থেকে বিবিসির সংবাদদাতা অমিতাভ ভট্টশালীকে ঊদ্ধৃত করে বিবিসি বাংলার খবরে বলা হয়, চিন্ময় দাসের গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে হিন্দু সংঘার্ষ সমিতি নামের একটি সংগঠনের সভা ছিল আগরতলার বাংলাদেশের সহকারী হাই কমিশনের সামনে। সভা শেষে সংগঠনের ছয়জনের একটি প্রতিনিধি দল কার্যালয়ের ভেতরে যায় স্মারকলিপি জমা দিতে।
“এসময় বাইরে থাকা কিছু হিন্দু যুবক হঠাৎ বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশন কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নামিয়ে ছিড়ে ফেলে- ঘটনাস্থল থেকে এমন কিছু ভিডিওচিত্র পাওয়া গেছে। পরে হাই কমিশন কার্যালয়ের কিছু সাইনবোর্ড ভাঙচুর করে ও আগুন লাগিয়ে দেয় তারা।”
টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়, বিক্ষোভকারীদের সহকারী হাই কমিশনে ঢুকে পড়ার অভিযোগ উঠেছে। সনাতনী ধর্মালম্বীদের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদে তারা এ বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছিল।
নর্থইস্ট লাইভ নামে একটি টেলিভিশনের অনলাইন খবরে বলা হয়, সার্কিট হাউজ এলাকার মহাত্মা গান্ধীর ভাস্কর্যে কাছে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি হঠাৎ নাটকীয় রূপ নেয়। বিক্ষোভকারীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ মিশনে ঢুকে পড়ে।
ওই ঘটনার একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, দুইদল বিক্ষোভকারীর মধ্যে বাংলাদেশের একটি পতাকা নিয়ে টানাহেঁচড়া হচ্ছে। পরে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা এসে বিক্ষোভকারীদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, বিক্ষোভকারীরা মিশন প্রাঙ্গণে ঢুকে পতাকার স্ট্যান্ড ভেঙে ফেলে পতাকার অবমাননা করেছে। তারা ভেতরে ঢুকে জিনিসপত্র ভাঙচুর করে।
এর আগে ২৮ নভেম্বর কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-হাই কমিশনের সামনে জাতীয় পতাকা এবং প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কুশপুত্তলিকা পোড়ানোর ঘটনায় কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছিল অন্তর্বর্তী সরকার।